সেলারি শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং ঝুঁকি
প্রকৃতির অন্যতম এক উপহার পাথুনী শাক বা Celery শাক। পাথুনী শাক বা Celery শাক যেমন সুস্বাদু তেমনি এ শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর।

সেলারি শাক এপিয়াসি পরিবারের অংশ, যার মধ্যে গাজর, পার্সনিপস, পার্সলে এবং সেলারিয়াক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটির মধ্যে কম ক্যালোরি আছে। এই শাক দিয়ে যেমন বিভিন্ন ধরণের নাস্তা তৈরী করা যায় তেমনি এটি শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে।
এই শাকটি আমাদের কাছে তেমন পরিচিত না হলেও এই শাকের আছে নানা রকম ঔষুধি গুনাগুন।
সেলারি শাকের মধ্যে যে ফাইবার থাকে সেটা হজম এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে উপকার করতে পারে। এই শাকের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা নিতে পারে।
আমাদের আজকের এই আয়োজনে থাকছে সেলারি শাক এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং আরো কিছু তথ্য।
প্রথমেই আমরা জানার চেষ্টা করবো , সেলারি শাক আসলে কি ?
সেলারি শাক কে বাংলায় বলা হয় পাথুনী শাক। এর বৈজ্ঞানিক নাম Apium গ্রাভিওলেন্স। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, এটি অ্যাপিয়েসিয়া পরিবারের এক ভ্যারাইটির জলাভূমির উদ্ভিদ।
এটির উৎপত্তি কথা থেকে কিংবা এটি কবে থেকে চাষ করা শুরু হয়েছে তা জানা যায়নি। এই শাকের পাতা , ডাটা এবং মাটির নিচের অংশ রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের বঙ্গ অঞ্চলে এই শাকটি খাবার তৈরিতে তেমন ব্যবহৃত না হলেও , চীন এবং পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে এই শাক খুব প্রচলিত একটি খাবার এবং সেসব জায়গায় এই শাক খুব জনপ্রিয়।
এই শাকের বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এর নির্যাস দিয়ে ওষুধ তৈরী হয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা সমূহ
সেলারি শাক আমাদের দেশের তেমন কোনো পরিচিত খাবার না হলেও এর রয়েছে দারুন সব উপকারিতা। চলুন সেগুলো দেখে নেয়া যাক।
শরীরের প্রদাহ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ
সেলারিতে অ্যাপিগিনিন নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এজেন্ট হিসাবে ভূমিকা পালন করে।
এটিতে এমন বৈশিষ্ট্যও থাকতে পারে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।
তাছাড়া এই উপাদান শরীরের প্রদাহজনক প্রোটিনের অভিব্যক্তিকে হ্রাস করে। যার ফলে শরীরের কোথাও কোনো ইনফেকশন হলে সেটা খুব দ্রুত সেরে যেতে সক্ষম।
সেলারিতে লুটেওলিন নামে একটি ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। এই উপাদান ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলতে সক্ষম।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে
সেলারি শাক উচ্চ রক্ত চাপ প্রতিরোধে সক্ষম। সেলারি শাকে যে ফাইবার থাকে তা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাইপারলিপিডেমিয়া
হাইপারলিপিডেমিয়া রক্তে ফ্যাটি অণুগুলির বৃদ্ধি বোঝায়। প্রায়শই কোনও লক্ষণ থাকে না তবে এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি বাড়ায়।
সেলারি শাক রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে
সেলারি শাকের অ্যাপিগেনিন স্নায়ু কোষগুলির বৃদ্ধি এবং বিকাশকে উদ্দীপিত করতে পারে।
এই উপাদান স্নায়ু কোষকে ভালো রাখতে এবং কোনো কিছু মনে রাখা কিংবা শেখার ক্ষমতা ঠিক রাখে।
তাছাড়া এটি আরো কিছু রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে যেমন :
- লিভার এর অসুখ এবং জন্ডিস।
- মূত্রনালীর সমস্যা।
- গলগন্ড। .
- বাতজনিত ব্যাধি।
এছাড়াও, নিম্নোক্ত রোগের চিকিৎসার জন্য সেলারি বীজ ব্যবহার করা হয়:
- ব্রঙ্কাইটিস।
- হাঁপানি।
- সোরিয়াসিস এবং অন্যান্য ত্বকের ব্যাধি।
- বমি।
- জ্বর।
সেলারি শাকের পুষ্টিমান
সেলারি মূলত জল দিয়ে তৈরি তবে এটি ডায়েটারি ফাইবারও সরবরাহ করে। প্রায় 4 গ্রাম (ছ) ওজনের একটি সেলারীর 4 ইঞ্চি ডাল প্রায় 0.1 গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে।
এপিজিন এবং লিউটোলিনের বাইরে সেলারিতে অন্যান্য উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে:
- সেলিনিন
- লিমোনিন
- কেম্পফেরল
- পি-কোমারিক অ্যাসিড
বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ফ্রি র্যাডিকাল হিসাবে পরিচিত অস্থির অণুগুলির দ্বারা সৃষ্ট সেলুলার ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। শরীর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলির একটি উপজাত হিসাবে এই পদার্থগুলি উত্পাদন করে, তবে যদি খুব বেশি বিল্ড আপ হয় তবে সেগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেলগুলি নিরপেক্ষ করতে এবং তাদের ক্ষতির কারণ থেকে রোধ করে যা অন্যথায় রোগের বিকাশের কারণ হতে পারে।
তাছাড়া সেলারি শাকে আছে অল্প পরিমানে ভিটামিন কে, ফোলেট, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি।
ব্যবহার
সেলারি শাক রান্না এবং কাঁচা দুই ভাবেই খাওয়া যায়। অনেক দেশেই এই শাক দিয়ে অনেক মজার মজার রেসিপি রান্না করা হয়। তাছাড়া এই শাক স্যুপ, সালাদ ইত্যাদিতেও ব্যবহৃত হয়।
ঝুঁকি
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। সেলারি শাকের ক্ষেত্রেও এই কথাটি প্রযোজ্য।
অতিরিক্ত সেলারি শাক খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া আরো কিছু সমস্যা হতে পারে , যেমন :
- আমবাত
- ফোলা
- শ্বাস নিতে সমস্যা
সেলারি খাওয়ার পরে কারও যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তবে তাদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন। কেউ কেউ এনাফিল্যাক্সিস নামে একটি প্রতিক্রিয়া অনুভব করে যা মারাত্মক হতে পারে।
তাছাড়া , গর্ভবতী মহিলাদের এই শাক কম খাওয়া উচিত। কারণ এটি জরায়ুতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে। যার কারণে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
তাছাড়া সেলারি শাকে অতিরিক্ত পরিমানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সুতরাং শাক খাওয়ার পূর্বে সেটাকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
শেষ কথা
আপনিও চাইলে এই শাকটি দিয়ে মজার মজার রেসিপি তৈরী করতে পারেন। কিন্তু যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা আছে এবং যারা গর্ভবতী তারা এই শাকটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালো কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।